পৃথিবীতে হরেক রঙের মানুষ, হরেক মত হরেক পথ ।

Khugesta Nur E Naharin
পৃথিবীতে হরেক রঙের মানুষ, হরেক মত হরেক পথ । সব মত সব পথ কখনও কখনও মিলে কখনও বিরোধ হয় কখনও বা সমান্তরালে চলে। পৃথিবীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সময়। যারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয় তাঁরাই মূলত বিজয়ী হয়। অনেকে আবার মনে করে এতো প্রতিযোগিতা সময়ের সাথে চলার দরকার কি ! সময়কে অনুভব করার জন্য প্রয়োজন অলসতা । তাঁদের মতে যারা সময়ের সাথে দৌড়ে চলে তাঁরা মূলত জীবনটাকে উপভোগ করতে পারে না, জীবন তাঁদের ফাঁকি দেয়।
কিছুদিন যাবৎ লক্ষ্য করছি অনেকেরই মৃত্যু ভাবনা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। মৃত্যু বিলাসিতা ! আমার মৃত্যুর পর অমুকে কাঁদবে, অমুকে কষ্ট পাবে, অমুকে অসহায় অনুভব করবে, সে একা হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রতিটি মানুষের জীবনেই কোন না কোন পর্যায়ে বিশেষ কোন সংকটময় মুহূর্তে মৃত্যু ভাবনা কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। মহান আল্লাহ্‌ পাঁকের নির্দেশ, '' প্রতিটি মোমিন মুসলমান প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি কাজে আল্লাহ্‌ কে স্মরণ করবে''। অর্থাৎ তাঁদের কোন কাজে বা কথায় অন্য কেও যেন তিল পরিমাণও ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। অনেকে আবার ভুল ব্যাখ্যা করে বলেন, '' আল্লাহ্‌ও তো তাঁকে ভয় করতে বলেছেন'' । এমন ভাবে উপস্থাপন করে, '' যেন স্বয়ং আল্লাহ্‌ পাঁক ভয়ঙ্কর কেও''। নাউজুবিল্লাহ ! সৃষ্টিকর্তা কখনও তাঁর সৃষ্টির প্রতি হৃদয়হীন হতে পারে না বলেই আমার বিশ্বাস। তাই প্রতিটি প্রাপ্তিতে তাঁর শুকুর গুঁজার করে বলি আলহামদুলিল্লাহ্‌, প্রতিটি অপ্রাপ্তিতে তাঁরই কোন অদৃশ্য ইশারায় কোথাও না কোথাও ভালোর অনুসন্ধানে লিপ্ত হই।
একটি মানুষ জীবনের এতোটা পথ পারি দিবে আর তাঁর জীবনে কোন দুঃখ, কষ্ট, হতাশা না পাওয়া থাকবে না , তা কি করে হয় ! তাই বলে এতো তাড়াতাড়ি মৃত্যু চিন্তা অর্থাৎ পরাজয়কে সহজ মেনে নেওয়া। প্রতিটি জীবনে কঠিন একটা সময়ে এমন মৃত্যু চিন্তা কাজ করে । চাওয়ার সাথে পাওয়া গুলো যখন মিলানো যায় না ঠিক সেই সময়টাতে। সারা দিনমান জুড়ে নিজের সাথে নিজের সংঘর্ষ । দ্বিধাগ্রস্ত মন বলে , '' আমি কি পৃথিবীর অনুপযুক্ত''! অভিমানী মন বলে, ''পৃথিবীটারই ক্ষমতা নেই আমাকে ধারণ করার '' !
পৃথিবীতে স্বল্প সংখ্যক মানুষ আছে, যারা সৌভাগ্য নিয়ে জন্মায়। তাঁরা চাওয়া মাত্র নিমিষেই সব কিছু পায়। আর এতো প্রাপ্তিই এক সময় কাল হয়ে দাঁড়ায়, তাঁদের জীবন বিমুখ করে তুলে। কারণ জীবনের কাছে তাঁদের আর কিছু চাওয়া বা পাওয়ার থাকে না বলে বেঁচে থাকাটা এক সময় মূল্যহীন মনে হয় ।
পৃথিবীতে প্রতি নিয়ত একজন সুস্থ মানুষ যেমন মৃত্যু চিন্তা করে, আবার মৃত্যু শয্যায় শায়িত একজন ব্যক্তি বাঁচার আকুতি জানায়, প্রাণ-পণ চেষ্টা করে । প্রতিটি জীবনে মৃত্যু অবধারিত জেনেও সম্মুখ মৃত্যুকে মেনে নেওয়া এতো সহজ নয়। মানুষ মৃত্যুর যত কাছে যায় বাঁচার আকাঙ্ক্ষা ততো প্রগাঢ় হয়। যারা আত্মহত্যা করে তাঁরাও মূলত বাঁচতেই চেয়েছিল। মৃত্যুর পর মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকার আকুতি থেকেই এই নিষ্ঠুর পথ বেছে নেওয়া।
পৃথিবীতে যত না পাওয়া থাকুক, কষ্ট থাকুক, মালিন্য হীন হৃদয়ে পৃথিবীর মুক্ত হাওয়ায় যে শ্বাস নেওয়া সেটাই সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
Share on Google Plus

About 222

0 comments:

Post a Comment