জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন প্রসঙ্গে :Swarup Roy

যে কোনও বিশেষ দিন আর আট দশটা দিনের চেয়েও আলাদা গুরুত্ব বহন করে । আপনার গত পাঁচ দিন আগের দুপুরের খাবারের মেনু কি ছিলো সেটা হয়তো মনে নাও থাকতে পারে কিন্তু আপনার বিবাহ অনুষ্ঠানের মেনু আপনার সারা জীবন মনে থাকবে , কিংবা গত জন্মদিনের পার্টির মেনুও অনেক দিন মনে থাকবে । এক্ষেত্রে মনে থাকার একমাত্র কারণ হচ্ছে বিশেষ দিনের উপলক্ষে ছিলো বলে । ঠিক তেমনই জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনও জাতীয় জীবনের একটি বিশেষ দিন । এই দিনের যে কোনও ঘটনা আলাদা গুরুত্ব বহন করে । আমাদের এক সমাপ্ত ইপিআই কর্মসূচি বন্ধ রাখার চেয়ে একটি জাতীয় কর্মসূচি বন্ধ রাখা দাবি আদায়ের জন্য অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে । আমাদের সৌভাগ্য আমরা এরকম একটি মহান কর্মযজ্ঞের অংশীদার । অথচ আমাদের কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় আমরা চরম অবহেলিত । আমরা ঘামে ভিজে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে সারা বাংলার শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা করি । অথচ জাতীয় কর্মসূচিতে নার্সদের দিয়ে আমাদের কর্মসূচি উদ্বোধনের মাধ্যমে আমাদের অবদান অন্ধকারে ফেলে রাখা হয় । সারা দেশের জনগণ এমন মেসেজ পাই যে আমরা নই নার্সরাই এ কাজের কান্ডারী । ব্যাপারটা এমন যে আমরা কলুর বলদের মতো খাটি আর সুবিধা ভোগ করে অন্য কেউ । আর এজন্যই আমাদের ফসলের উপর ভাগ বসাতে আসে অন্য কেউ । আমাদের অর্জন গুলি অন্যেরা নিজেদের বলে দাবি করে । তাই আমরা এই জাতীয় বিশেষ দিন বর্জনের মাধ্যমে আমরা আমাদের অস্তিত্ব জানান দিতে চাই । আমরা 500/1000 টাকা বরাদ্দের জন্য নয়, আমরা আমাদের মূল দাবি আদায়ের জন্য এবং আমাদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার জন্য জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন কর্মসূচি বর্জন করবো । বরাদ্দ নিয়ে এবং কর্মসূচি বিষয়ে আমাদের বিভিন্ন অভিযোগ হতাশা রয়েছে, কিন্তু সেটা মূল দাবির তুলনায় অতি গৌণ । কোনও রকম বরাদ্দ ছাড়াও সারা বাংলার স্বাস্থ্য সহকারীগণ নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে এত বছর যাবৎ এই জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন কর্মসূচি অত্যন্ত সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করে এসেছে । আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবো অর্থমন্ত্রী তো অনেক দূরের স্বয়ং আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রীও জানেন না যে স্বাস্থ্য বিভাগের এই সামান্য বেতনের স্বাস্থ্য সহকারীরাই এতোবৎসর যাবৎ সরকারের মুখাপেক্ষী না থেকে নিজেদের পকেটের নগদ কোটি কোটি টাকা খরচ করে এই জাতীয় কর্মসূচি সফল ভাবে সম্পাদন করে আসছে ( সরকারের বরাদ্দের টাকা কর্মসূচি বাস্তবায়নের অনেক পরে স্বাস্থ্য সহকারীর হাতে আসে ) । 
তাই আমরা আমাদের মূল দাবি তথা চার দফা দাবি আদায়ের প্রথম কর্মসূচি হিসাবে জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন বর্জন করি । এক্ষেত্রে আমাদের আন্দোলনের গতি শ্লথ করতে হয়তো কর্তারা আমাদের সামনে সামান্য বরাদ্দ নামক মূলা ঝুলিয়ে দিতে পারে । তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে । সামান্য বরাদ্দের বিনিময়ে আমরা আমাদের মূল লক্ষ্য হতে পিছু হইবো না এবং আমাদের এতবড় সুযোগ হাতছাড়া করবো না । ( এই বিষয়ে আমার আগের একটা লেখা নেতৃবৃন্দদের মনে করিয়ে দিতে চাই । নিন্মে আগের লেখাটি দেওয়া হলো ।)
________________________________________
23 ডিসেম্বর জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন 2017 এর দ্বিতীয় রাউন্ড । 23 ডিসেম্বর প্রোগ্রামের তারিখ নির্ধারিত হওয়ায় এই জাতীয় প্রোগ্রাম টি আমাদের জন্য হতে পারে দারুণ এক ট্রাম কার্ড । এটা জাতীয় কর্মসূচি হওয়ায় আমাদের জন্য একটা দারুণ সুযোগ হতে পারে দাবি আদায়ের হাতিয়ার হিসাবে । আমি নিশ্চিত যে এই বিশাল জাতীয় কর্মযজ্ঞ কিভাবে এবং কাদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয় সেটা দেশের অনেকেই জানেনা । খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রীও এটা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখে কিনা আমার সন্দেহ আছে । নিকট অতীতে আমাদের একটা রাউন্ড সময় মতো হতে পারেনি বলে ( সেটা যে কারণে হোক ) সারা দেশব্যাপী অনেক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল । আর যদি একটা রাউন্ড বন্ধ করে দেওয়া হয় সেটা দেশব্যাপী কি ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে সেটা সহজেই বোধগম্য । আমরা এই জাতীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন থেকে নিজেদের বিরত রেখে জানান দিতে চাই আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের কে , আমাদের কাজ কি । স্বাস্থ্য বিভাগের সকল সফল কাজের কারিগর আমরা আর সুফল ভোগী সকলেই, অবহেলিত শুধু আমরা । আমার মনে হয় এক সাপ্তাহ ইপিআই কর্মসূচি বন্ধের চেয়ে একটা জাতীয় কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণা অনেক বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করবে । তাই আমার ইচ্ছা এবং আমার মনে হয় সারা দেশের প্রত্যেক স্বাস্থ্য সহকারীর ইচ্ছা 19 ডিসেম্বর মানব বন্ধন কর্মসূচি থেকে 23 ডিসেম্বর জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস কর্মসূচি বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হোক ।
Share on Google Plus

About 222

0 comments:

Post a Comment